মোংলায় আওয়ামী লীগ নেতার রোষানলে পড়ে ১২টি পরিবার জেল খেটে ও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, বনদস্যুর রক্ষিত টাকা আত্মসাৎ করে জমিজমা ও আলীশান বাড়ীর মালিক বনে গেছেন আওয়ামী নেতা কাদের
- আপডেট টাইম : ০২:২৬:৫৪ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩
- / ১৫১ ৫০০০.০ বার পাঠক
মোংলা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার রোষানলে পড়ে কয়েকটি ভূমিহীন নিরীহ পরিবার মিথ্যা মামলায় জেল খেটে ও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ওই ভূমিহীনদেরকে উপজেলা প্রশাসনের দেয়া খাস জমিতে মাছ চাষ করেও তা ধরতে পারছেনা তারা। ভূমিহীনদের চাষ করা মাছ লুটসহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও মারধর করে ঘর ছাড়া করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও একটি হত্যা মামলার আসামি মাওলানা আব্দুল কাদের। এই নেতা আত্নসমর্পণ করা সুন্দরবনের এক দস্যুর রক্ষিত ৯০ লাখ টাকাও আত্নসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আত্নসমর্পণ করা দস্যু গামা বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড গোলাম রসুল ফকির। আত্নসাৎ করা সেই টাকা দিয়ে মাওলানা কাদের মোংলার সোনাইলতলায় জমি ও খুলনায় করেছেন আলীশান বাড়ী। এ অভিযোগ করেছেন গোলাম রসুল ফকিরসহ উপজেলার সোনাইলতলা এলাকার নারী-পুরুষ বাসিন্দারা।
সরেজমিনে উপজেলার সোনাইলতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভূমিহীন ১২টি পরিবারের শতাধিক নারী-পুরুষ মাওলানা আব্দুল কাদেরর বিরুদ্ধে ভীতিকর নানা অভিযোগ করেন। এক সময়ের জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও ভোল পাল্টে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নানা রকম কু-কর্মে লিপ্ত হন সুবিধাবাদী এই নেতা। এ সময় সুন্দরবনের আত্নসমর্পণকারী বনদস্যু গামা বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড গোলাম রসুল ফকির অভিযোগ করে বলেন, সে সময় দস্যুতা করে দুই দফায় ৯০ লাখ টাকা মাওলানা আব্দুল কাদেরর কাছে জমা রাখি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে টাকা ফেরত চাইলে সে সোনাইলতলা এলাকার স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল তালুকদারকে খুন করার জন্য প্রস্তাব দেয়। এতে সে রাজি না হওয়ায় তার টাকা ফেরত দেয়নি। পরে শহিদুল তালুকদারকে ২০০৭ সালে ভাড়া করা এক খুনিকে দিয়ে হত্যা করে মাওলানা কাদের। এ হত্যাকান্ডের মূল আসামীও মাওলানা আব্দুল কাদের। এদিকে তার কাছে জমা রাখা টাকা দিয়ে গোলাম রসুলকে জমি কিনে দেওয়ার কথা বললেও দেয়নি, এমনকি ফেরত দেওয়া হয়নি সেই টাকাও।
গোলাম রসুল আরও বলেন, সেই টাকা দিয়ে মাওলানা কাদের খুলনার টুটপাড়া এলাকায় ছয়তলা আলীশান বাড়ি করেছেন। এলাকায় জোরপূর্বক অন্যের জমি দখল করে চিংড়ি চাষ করে হয়ে যান কোটিপতি। দীর্ঘকাল সরকারি খাস জমি ঘিরেও করেছেন মাছের চাষ। মূলত ওই খাম জমি উপজেলা প্রশাসন ১২টি ভূমিহীন পরিবারকে মাছ চাষের অনুমতি দিলে ক্ষোভে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন মাওলানা কাদের। তার এই ক্ষোভের রোষানলে পড়েন ওই ১২টি ভূমিহীন পরিবার।
ভূমিহীন রিনা বেগম বলেন, সরকারের দেয়া খাস জমিতে মাছ করে আসছিলাম। কিন্তু কাদের মাওলানা রাতের আঁধারে সেই মাছ লুট করে নিয়ে যায়। আমি গরিব মানুষ, কোথায় যাব, এর বিচার চাই। আরেক ভূমিহীন জামিল ফকির বলেন, আমার আপন চাচাতো ভাই মাওলানা কাদের। দীর্ঘদিন সরকারি খাস জমি দখলে রেখে মাছ চাষ করছিলো সে। পরে ওই জমি উপজেলা প্রশাসন আমাদের ১২ভূমিহীন পরিবারকে মাছ চাষ করতে বন্দোবস্ত দেয়। সেই থেকে কাদের মাওলানা আমাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছেন। আমাদের ভূমিহীন ১২টি পরিবারের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। পরে আমরা সবাই জেল খেটে কয়দিন আগে জামিনে বেরিয়ে আসি। পাঁচ কাঠা করে জমি দিয়ে সরকার আমাদের মাছ চাষ করতে সংসার চালানোর ব্যবস্থা করেছেন। সেইভাবে আমরা চলে আসছি। কিন্তু আমাদের অপরাধ কোথায়? মাওলানা কাদের কেন আমাদের ওপর নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় ঢুকালেন বলেই কেঁদে ওঠেন আরেক ভূমিহীন মান্নান ফকির। মাওলানা কাদেরের নিযার্তন থেকে রেহাই পেতে ও তার বিচারের দাবীতে বুধবার দুপুরে ওই এলাকায় কাদেরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রর্দশন করেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে মাওলানা কাদেরের হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না খোদ উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদারও। খাস জমি জবর দখল ও জাল দলিল করতে আবু তাহের হাওলাদারের স্ত্রী সংশ্লিস্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়ারেস কাম সার্টিফিকেট না দেয়ায় তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ষড়যন্ত্রমূলক সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদারের বিরুদ্ধে চিংড়ি ঘের দখলের অভিযোগ এনে কাল্পনিক তথ্য উপস্থাপন করে মিথ্যা সংবাদ সম্মেলন করেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার বলেন, মাওলানা কাদের নিজেই তার ঘের করে আসছেন। কখনই তার ওই ঘের দখল হয়নি। মাওলানা কাদেরের অন্যায় আবদার না রাখায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে তার ঘের দখলের মিথ্যা সংবাদ সম্মেলন করে। তার মিথ্যা সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে আমিও পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছি।
এদিকে মাওলানা কাদেরর চিংড়ি ঘেরে দায়িত্বে থাকা তার বোন মাহফুজা বেগমও বলেন, চিংড়ি ঘের কেউ দখল করেনি। প্রতিদিনই এই ঘের থেকে আমার ভাই মাছ ধরে বিক্রি করছেন বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।
তবে মাওলানা কাদেরের খাস জমি জবর দখল, জাল দলিল ও ভূমিহীনদের উপর নিযার্তনের ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদারের বিরুদ্ধে ঘের দখলের কোন প্রমাণ পাননি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার কখনও এ এলাকায়ও আসেন না। অহেতুক তার বিরুদ্ধে ঘের দখলের মিথ্যা অভিযোগ তুলে মাওলানা কাদের সংবাদ সম্মেলন করেছেন। কারণ কাদের খাস জমি দখলে রাখতে ও জাল দলিলের ওয়ারিস কাম সার্টিফিকেট চেয়ে না পেয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন কাদের।
এ বিষয়ে মাওলানা আব্দুল কাদের দাবী করে বলেন, খাস জমিতে মাছ চাষকারীরা পাশ্ববর্তী আমার ৭৫ বিঘার চিংড়ি ঘের থেকে মাছ চুরি করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করি। এছাড়া সুন্দরবনের কোন দস্যুদের সাথে আমার কথনও সম্পর্ক ছিলনা, আমি যেন তেনো লোক না। আমার টাকা দিয়ে খুলনায় বাড়র করেছি। হত্যা মামলায় আমাকে জড়িয়ে আসামী করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদেরা বলে দাবী তার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ বলেন, মাওলানা কাদেরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ও বিশেষ করে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া ভূমিহীনদেরকে হয়রানীর বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।