কয়রায় প্রায় দুই কোটি টাকায় নির্মিত গুচ্ছগ্রাম প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানিতে ভাসছে
- আপডেট টাইম : ১০:৩৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ১৫৯ ৫০০০.০ বার পাঠক
দক্ষিণ খুলনার সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের শেওড়া গ্রামের কপোতাক্ষ নদীর চরে প্রায় দুই কোটি টাকায় নির্মিত গুচ্ছগ্রাম প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই কপোতাক্ষ নদীর জোয়ারের পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে আঙিনার বালি ও কাঁচা ঘরের ভিটের মাটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কপোতাক্ষ নদীর চরে গড়ে তোলা ৬০ টি জরাজীর্ণ বাসগৃহ ও সুন্দর একটি অফিস কক্ষ রয়েছে। চারটি অগভীর নলকূপের সবগুলোই অকেজো। পিলার ও তার থাকলেও নেই বিদ্যুৎ সংযোগ ।চরম নাজুক অবস্থায় রয়েছে এই গুচ্ছগ্রাম। নদীর পানি রক্ষা এর তিন পাশের বাঁধ। বাঁধের উত্তর ও পশ্চিম পাশে বেশ বড় দুটি ভাঙ্গন দিয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পানিতে তলিয়ে যেতে দেখা যায় তিনটি পুকুর, চলাচলের রাস্তা ও আঙ্গিনা।
নদীর চরে নির্মিত এই গুচ্ছগ্রামের যাতায়াতের তেমন কোন সুব্যবস্থা নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা সহ নেই বিদ্যুৎ সংযোগ ।চরম মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে শেওড়ার এই গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের। নাগরিক সুবিধা না থাকায় ইতোমধ্যে ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে দুই তৃতীয়াংশ উপকার ভোগী ও অসহায় গরিব মানুষেরা। কাজের শুরু থেকেই পরিকল্পনার অভাবে, অপরিকল্পিত ভাবে গুচ্ছগ্রাম টি গড়ে তোলায় সরকারের ভালো একটি উদ্যোগের সফলতা আসেনি বলে মনে করেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উল্লেখযোগ্য কোনো বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি হলেই এমনিভাবে তলিয়ে যায় ঘরের মেঝের ভিট। মাটি দিয়ে তৈরি হওয়ায় ,নদীর স্রোতে ধ্বসে যায় ।বারবার মেরামত করেও ভালো রাখা যায় না। ঘরগুলো দুর্বল হয় পড়েছে। সামান্য ঝড় হলেই পড়তে হয় চরম ঝুঁকিতে। গুচ্ছগ্রামের উপকারভোগীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন ,প্রধানমন্ত্রী আমাদের বসবাসের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পে সাতটি ঘরের ব্যবস্থা করায় আমরা খুব খুশি। তবে কিছু সমস্যায় আমাদের মানবেতর ভাবে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। নদীর পানি রক্ষায় মাত্র তিন থেকে চার শত মিটার টেকসোই বাঁধ নির্মাণ ও মেঝেগুলো পাকা করার ব্যবস্থা করতে পারলে আমরা শান্তিতে বসবাস করতে পারতাম ।এ ছাড়া সুপেয় পানি, বিদুৎ, ও পুকুরের পাড় বাঁধার ব্যবস্থা করতে পারলে আমাদের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি আত্নকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারতাম।এ বিষয়গুলো সমাধানের জন্য সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ৬০ টি ঘর নির্মাণের জন্য ৯০ লাখ চারটি নলকুপ স্থাপনের জন্য তিন লাখ বিশ হাজার কমিউনিটি ভবন তৈরির জন্য ৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকায় এবং আশ্রয়ন প্রকল্পের জায়গা ভরাটের জন্য ২৫১.৪০১ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয় কিন্তু দায় সারা কাজ করে সমুদয় অর্থ লাপাত্তা হয়ে গেল।
বর্তমান ইউএনও অনিমেষ বিশ্বাস ও তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর রানার কাছে বরাদ্দের পরেও সুপেয় পানির জন্য ডিপ টিউবয়েলের ব্যবস্থা না করে স্যালো বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সদুত্তোর পাওয়া যায়নি।
এছাড়া নদীর চরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, নদীর তীরে পায়েলিং এর মাধ্যমে ব্যবস্থা করতে পারলে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারত না। তবে পায়েলিং এর বরাদ্দ না পাওয়ায় আমরা কাজ করতে পারিনি । তবে তিনি আরো বলেন ,পুকুর সংরক্ষণের মাধ্যমে আত্নকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ইচ্ছা থাকার পরেও অন্যত্র চলে আসায় সেটার ব্যবস্থা করতে পারিনি।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী বলেন, ওখানে ৪০ দিনের কর্মসংস্থান প্রকল্পের একটি বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে আশা করছি আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। বাস্তবে গুচ্ছগ্রামের দৃশ্য স্বচোখে না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন সচেতন মহল। সেখানে চলছে অনিয়ম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পরে আর কোন অতিরিক্ত বরাদ্দ না পাওয়া যায় না আমরা কয়েকবার আবেদন করার পরেও বলা হয়েছে নতুন কোন বরাদ্দ দেওয়া হবে না এজন্য আমাদেরকে স্থানীয়ভাবে টিয়ার খাবিখা থেকে সংস্কার কাজ করতে হয় ।তা দিয়ে টেকসোই বাঁধ নির্মাণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। এছাড়া গুচ্ছগ্রামগুলো বেড়িবাঁধের বাইরে হয়েছে বলে তা নিরাপদ না। একবার বাঁধ সংস্কারে ব্যবস্থা করা হয়েছিল নদীর তীর হওয়ায় ফের ভেঙ্গে গেছে ।ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দেন তিনি। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যানের সেদিকে দেখার সময় নেই বলে গ্রামবাসী জানান। উল্লেখ্য এ উপজেলায় ছয়টি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। নদীর চরে নির্মিত হওয়ায় সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতে এবং জোয়ার পানির বৃদ্ধিতে অধিকাংশ স্থানে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয় বসবাসকারীদের। এছাড়া প্রায় সবগুলোতেই কমবেশি সমষ্যা রয়েছে। সেখানে বসবাসের জন্য মাথা গুজার ঠাই নিরাপদ না। দেখার জন্য কেউ নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্হানীয়রা।