শ্রীলংকায় “সাফ অ-১৭ চ্যাম্পিয়নশীপে খেলবেন স্কুল ফাঁকি দিয়ে বল নিয়ে মেতে উঠা বাঘার সেই স্বপন
- আপডেট টাইম : ০২:৩৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ৩২৩ ৫০০০.০ বার পাঠক
পাড়ার খেলায় দলে নিত না কেউ। প্রতিদিন বিকেলে খেলার মাঠে হাজির হতো স্রেফ বল কুড়ানোর লোভে! স্কুল ফাঁকি দিয়ে চলে আসতো খেলার মাঠে। দুপুরের স্কুল বিরতিতে অন্যরা যখন খাবার-গল্প নিয়ে ব্যস্ত, তখন একাই বল নিয়ে মেতে উঠত ফুটবল খেলায়। প্রচুর স্কুল কামাই করার জন্য খেয়েছেন শিক্ষকদের কানমলাও। ছেলের দুরন্তপনায় মা-বাবার ছিল নাভিশ্বাস! অজপাড়াগাঁয়ের সেই ছেলেটি স্বপন হোসেন। সেই দুরন্ত ছেলেটিই এখন মাঠ মাতাচ্ছেন ফুটবলে।
সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশ অনুর্ধ -১৭ জাতীয় ফুটবল দলের ফুটবলার হিসেবে। আগামী ০৫ সেপ্টেম্বর হতে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ পর্যন্ত শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত হবে “সাফ অ-১৭ চ্যাম্পিয়নশীপ ২০২২ খেলা। বাংলাদেশ অ-১৭ জাতীয় ফুটবল দল সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। স্বপন হোসেনের মতো রাজশাহীর আরো তিন তরুন ফুটবলার সেই খেলায় সুযোগ পেয়েছেন। স্বপন হোসেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ দুলাল হোসেনের বড় ছেলে।
স্থানীয় শিক্ষক মাহফুজুর রহমান জানান, কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ফোরে পড়ার সময় লাথি দেওয়া শেখে ফুটবলে। সেই থেকে ফুটবলই যেন তার ধ্যান-জ্ঞান! ফুটবল নিয়েই মেতে থাকতো সারাক্ষন। স্কুল ফাঁকি দিয়ে চলে আসতো পানিকুমড়া সবুজ সংঘ খেলার মাঠে। যা দেখে প্রধান শিক্ষক নীলা আপা আমাকে বলতেন ওকে শাসন করতে। আমার ভয়ে মাঠের সামনের দোকানের পেছনে লুকিয়ে থাকতো। তাকে বকা দিলে বলতো স্যার খেলা ছাড়া অন্য কিছুই মাথায় ঢোকেনা।
পানিকুমড়া গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চল জানান,স্কুল থেকে ফিরেই বই-খাতা রেখে চলে আসতো পানিকুমড়া সবুজ সংঘ খেলার মাঠে। প্রথম প্রথম খেলার সুযোগ মিলত না। এলাকার বড়রা যখন খেলতেন, ছেলেটি দাঁড়িয়ে থাকত মাঠের কিনারে। কখন বলটি সীমানার বাইরে আসবে- এ আশায়! শুধু বল কুড়ানোর লোভেই প্রতিদিন বিকেলে মাঠে হাজির হতো এই কিশোর!
উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক ও ক্রীড়া শিক্ষক জাফর ইকবাল বলেন, স্বপন হোসেন বাঘা উপজেলা ফুটবল দল, পানি কুমড়া সবুজ সংঘ, রাজশাহী লীগ, ঢাকা লীগ খেলেছে। উপজেলার বাইরেও অসংখ্য মাঠে সুনামের সাথে খেলেছে। বলরামপুরের সেই ছেলে স্বপন বাংলাদেশ অনুর্ধ -১৭ জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে।
এর আগে ফাইভে পড়াকালিন সময়ে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দুরে থেকে বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আসতো প্র্যাকট্রিস করার জন্য। ওই সময় তার খেলা দেখে আমি মুগ্ধ হই। পরে উপজেলা বয়স ভিত্তিক খেলায় দলে অন্তর্ভুক্ত করি এবং বাঘা উপজেলা ফুটবল দলের অধিনায়ক করি। সে সময় তার উন্নত মানের বুট ছিলনা বলে দুঃখ করতো। বলেছিলাম কষ্ট কর একদিন সব পাবি। পরে সে খুলনা বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পায়।
উদীয়মান ধারাভাষ্যকর প্রভাষক আব্দুল হানিফ মিঞা বলেন,স্বপন হোসেন শুধু বাঘার নয়, দেশের উদাহরণ হয়ে থাকবে আশা করছি।
২ সেপ্টেম্বর শ্রীলংকায় উদ্দেশে যাত্রার আগে কথা হয় স্বপনের সঙ্গে। তাঁর মুখ থেকেই জানা গেল খেলার সুযোগ পাওয়ার অনুভূতি। স্বপ্নেও ভাবেননি শ্রীলংকায় খেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। সুযোগটা কাজে লাগাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। তিনি জানান, “ক্লাসের জানালা দিয়ে খেলার মাঠ দেখা যেত,তখন বড় ভাইদের মাঠে খেলতে দেখলে ক্লাসে মন বসত না। এজন্য শাস্তিও পেয়েছেন। অনেক সময় মা-বাবা বলছেন, ‘পড়াশোনার নাম নাই, সারাক্ষণ শুধু ফুটবল আর ফুটবল। ফুটবল কি ভাত দেবে’?” এর পরেও বাবার চাইতে বেশি সহযোগিতা পেয়েছি মায়ের।
তিনি জানান,কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময়ে বিকেএসপিতে ভর্তির জন্য রাজশাহী স্টেডিয়ামে যায়। বাংলাদেশ এলিড একাডেমী কর্তৃক বাছাই পর্বে টিকে গেলাম। ৬ মাস এর ক্যাম্পিং ট্রায়ালের পর খুলনায় বিকেএসপিতে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হই। এখনো সেখানেই পড়ছি দশম শ্রেণীতে। মিড ফিলডার হিসেবে লেফট সাইডে খেলোয়াড় স্বপন জানান, মাগুরায় আসাদুজ্জামান ক্লাবে থার্ড ডিভিশনে খেলেছি। তার জাসিং নম্বর ৮। স্বপন হোসেন বলেন, দলের অগ্রগতিতে ভ’মিকা রেখেছেন বাংলাদেশ ক্রীড়া ডিরেক্টোর পলস মনি,কোচ সাবেক ফুটবলার রবিউল ইসলাম,আবুল হোসেন ও মেহেদী স্যার ।
ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ জানান, সেই ম্যাচে সবাইকে চমকে দেয় বল কুড়ানো সেই ছেলেটি! এভাবে খেলতে খেলতে একসময় নাম-ডাক ছড়িয়ে পড়ে বিকেএসপি ফুটবলে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো শহরের রেসকোর্স ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে “সাফ অনূর্ধ্ব -১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২” এর খেলায় পাকুড়িয়া ইউপি’র বলরামপুরের গর্ব, অতি স্নেহের স্বপন চান্স পেয়েছে।
স্বপনের মা রোকেয়া বেগম বলেন,ছেলে ফুটবলে নাম কুড়াবে, সেই স্বপ্ন নিয়ে শ্রীলংকায় গেছে। বাবা দুলাল হোসেন বলেন, ‘ছোট থাকতে প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরত হাতে-পায়ে ব্যথা নিয়ে। ভয় পেতাম খেলতে গিয়ে যদি হাত-পা ভেঙে ফেলে। কিন্তু ও বারণ শুনত না। বড় হওয়ার পর আর বাধা দিইনি।##