দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পর গণপূর্তে বেপরোয়া উৎপল
- আপডেট টাইম : ০৫:০০:৫০ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট ২০২২
- / ২৭৬ ৫০০০.০ বার পাঠক
ঘুষ, দুর্নীতি ও নানা অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রিজার্ভ) উৎপল কুমার দে ও তার স্ত্রী গোপা দের বিরুদ্ধে বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তর ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। উৎপল দম্পত্তির এহেন অপকর্মের দ্বায়ভার নিতে নারাজ গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এমন মন্তব্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার। তবে কেউ কেউ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এমন দুর্নীতি পরায়ন ব্যক্তি কিভাবে বহাল তবিয়্যতে থেকে বরিশালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জোনের দায়িত্ব পেলেন তা বোধগম্য নয়। গত পর্বে উৎপল দম্পত্তির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর গণপূর্তের একাধিক ব্যক্তি দৈনিক সময়ের কণ্ঠকে ফোন করে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান ও উৎপল দম্পত্তির সাজা না হওয়া পর্যন্ত সোচ্চার থাকার জন্য অনুরোধ করেন। তারা আরও বলেন, উৎপল দম্পত্তি গণপূর্তকে কলুষিত করেছেন এবং বর্তমানেও তিনি বরিশাল জোনে নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন। এ দায়ভার গণপূর্ত নিবে না আমরা তার বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা চাই।
গত পর্বের সংবাদ প্রকাশের পর উৎপল গণপূর্তে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি বিভিন্ন পর্যায় থেকে গণপূর্তে জোর তদবির শুরু করেছেন চাকুরিতে বহাল থাকার ব্যাপারে। যা গণপূর্ত সূত্রে নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রভাবশালীর মাধ্যমে দৈনিক সময়ের কণ্ঠের সম্পাদক বোরহান হাওলাদার জসিম ও তার প্রতিনিধিকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ আসাদুজ্জামান সম্রাট তার মোবাইল থেকে এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর পিএস পরিচয়ে সম্পাদককে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।
উৎপল কুমার দে ও তার স্ত্রী গোপা দে’র বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশের পর পাঠকগণের দ্বিতীয় মামলার ব্যাপারে জানার আগ্রহের কথা বিবেচনা করে দ্বিতীয় মামলার বিস্তারিত প্রকাশ করা হলো। দ্বিতীয় মামলাটিতে শুধুমাত্র উৎপল কুমার দে’ কে আসামী করা হয়েছেÑ যাহার মামলা নং-৩, তারিখ : ০৫/০৮/২০২০ইং। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে আসামী উৎপল কুমার দে জাতীয় পরিচয়পত্র নং-৩৭০-১৪৩-৯৫৫০, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রিভার্জ), গণপূর্ত অধিদপ্তর, ঢাকা, পিতা : দুলাল চন্দ্র দে, মাতা : পারুল রানী দে, বর্তমান ঠিকানা : ফ্ল্যাট নং-৫/এ, ৮১/৩, অতীস দীপঙ্কর সড়ক, সবুজবাগ,ঢাকা-১২১৪, স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম + পোষ্ট : চক্রশালা, থানা : পটিয়া, জেলা : চট্টগ্রাম একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে দুর্নীতি এবং বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের সাথে অসংগতিপূর্ণ ১.১৮.১৭.৯০৩/- টাকার সম্পদ অর্জন করত: তা নিজ ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় এবং উক্ত অবৈধ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্য স্থানান্তর/রূপান্তর/হস্তান্তরে
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ : দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকার নথি নং-০০.০১.০০০০.৫০২.০১.১০১.১৯ এর অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে আসামী উৎপল কুমার দে’র নামে মোট ১,৮৩,৩৫,৬৭৪/- টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্যাদি পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ২০১৭-২০১৮ করবর্ষ পর্যন্ত তার আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত ৬৫,১৭,৭৭১/- টাকার বেতন-ভাতাদি বৈধ আয় হিসেবে বিবেচনা করে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত অতিরিক্ত (১,৮৩,৩৫,৬৭৪-৬৫,১৭,৭৭১) = ১,১৮,১৭,৯০৩/- টাকা তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসংগতিপূর্ণ অবৈধ সম্পদ, যা তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনকালীন দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জন করেছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে পরিলক্ষিত হয়। অপরদিকে তিনি বিভিন্ন সময়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, শান্তিনগর শাখা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক লিমিটেড, কাকরাইল শাখা, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, প্রেসক্লাব শাখা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আন্দরকিল্লা শাখা, চট্টগ্রাম, প্রাইম ব্যাংক, মৌচাক শাখা, দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড, গুলশান শাখা, ব্রাক ব্যাংক লিঃ, গুলশান শাখা এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিঃ গুলশান শাখায় সঞ্চয়ী ও এফডিআর একাউন্টে অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন করে উক্ত অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর এবং হস্তান্তর করেছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানকালে আসামী উৎপল কুমার দে’র নামে অর্জিত সম্পদের স্বপক্ষে তার বেতন-ভাতা ব্যতিতঅন্য কোনো সুনির্দিষ্ট বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া যায়নি। প্রকৃত পক্ষে তিনি সরকারি কর্মচারী হিসেবে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থ দ্বারা বর্ণিত স্থাবর-অস্থাবর/সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করেছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রাপ্য তথ্য প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত হয়।
সার্বিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, আসামী উৎপল কুমার দে অসৎ উদ্দেশ্যে দুর্নীতির আশ্রয়ে অবৈধ পন্থায় জ্ঞাত আয়ের সাথে অসংগতিপূর্ণ মোট ১.১৮,১৭,৯০৩/- (এক কোটি আঠার লক্ষ সতের হাজার নয়শত তিন) টাকার সম্পদ অর্জন করত তা নিজ ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় এবং উক্ত অবৈধ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে স্থানান্তর/রূপান্তর/হস্তান্তরে
দ্বিতীয় মামলার অভিযোগ ও বেপরোয়া আচরণের ব্যাপারে উৎপল কুমার দে-এর মোবাইলে ফোন করলে তিনি ফোন কেটে দিয়েছেন। এসএমএসের মাধ্যমে পরিচয় দিয়ে আবারও কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি।