পটুয়াখালীর গলাচিপা জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মেম্বর বাহিনির হামলায় আহত-৫
- আপডেট টাইম : ০৯:৫৪:০০ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ২৮ আগস্ট ২০২২
- / ১৬৪ ৫০০০.০ বার পাঠক
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ১ নং আমখোলা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের রামানন্দ গ্রামের দর্জি বাড়িতে গত ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার বেলা আনুমানিক ১১ঃ৩০ এর সময় জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষ স্থানীয় ইউপি সদস্য মো মামুন সরদার তার দলবল নিয়ে দর্জি বাড়িতে অতর্কিত হামলা ও ভাংচুর চালায়। এসময় বাড়ির অধিকাংশ পুরুষ কাজের উদ্দেশ্য বাহিরে থাকায় উক্ত হামলায় ৪ নারী ও ১ জন পুরুষ সহ মোট ৫ জন আহত হয়ে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। হামলায় আহতরা হলেন ১. মো. মোনাসেফ দর্জি (৭০), পিতাঃ মৃত উমার দর্জি। ২. মোসাঃ জুলেখা বেগম (৬০), স্বামীঃ মো. মোনাসেফ দর্জি। ৩. মোসাঃ পিয়ারা বেগম (৬০) (মোনাসেফ দর্জির বোন)। ৪. মোসাঃ রাবেয়া বেগম (৩৫), স্বামীঃ মো. ফারুক দর্জি। ৫. মোসাঃ লাইজু বেগম (২৫), স্বামীঃ মো. রবিউল দর্জি।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মামুন মেম্বরদের দাবি তার দাদা আ. কাদের সরদার বিগত ৫০ বছর পূর্বে মৃত হাতেম দর্জির নিকট থেকে রেজিস্ট্রেরি দলিল মূলে ২.৫০ (দুই একর পঞ্চাশ) শতাংশ পরিমান জমি ক্রয় করেন। আ. কাদের সরদারের অবর্তমানে তার সন্তানেরা জমির মালিকানা অর্জন করেন। সেই মালিকানার ভিত্তিতে তারা দর্জি বাড়ির রেকর্ডিও সম্পত্তির বিভিন্ন দাগ থেকে ১.৩০ (এক একর ত্রিশ) শতাংশ জমি রেজিস্ট্রারি দলিল না দেখিয়ে ভোগ দখল করতে থাকেন। মূলত এখান থেকে সমস্যার সূত্রপাত হয়।
এ বিষয়ে হামলায় আহত মোনাসেফ দর্জির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাচা মৃত্যু হাতেম দর্জির নিকট থেকে যে পরিমাণ জমি ক্রয় করেছে বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি জমি তারা গায়ের জোরে ভোগ দখল করে আসছিলেন, এনিয়ে কথা বলা কিংবা বাঁধা দিতে গেলে তারা বিভিন্ন সময়ে হামলা করে আসছিলো। একপর্যায়ে স্থানীয় গ্রাম্য শালিস বৈঠকের আয়োজন করলে তারা সেই বৈঠকে তাদের দাবি অনুযায়ী জমির দলিল দেখাতে পারেনি। এরপর থেকেই তারা মারমুখী ও উগ্র আচরন করতে থাকে এবং যেকোন সময়ে হামলা ও মামলার ভয় দেখাতে থাকে। গত বৃহস্পতিবার বেলা আনুমানিক ১১ঃ৩০ এর সময় হঠাৎ করে মামুন মেম্বরের নেতৃত্বে ১. আনোয়ার সরদার, পিতাঃ ফজলুল হক সরদার। ২. জাকির সরদার, পিতাঃ কদের সরদার। ৩. দেলোয়ার সরদার, পিতাঃ কাদের সরদার। ৪. মোকলেস সরদার, পিতাঃ কাদের সরদার। ৫. আবুল বাসার সরদার, পিতাঃ কাদের সরদার। ৬. ইমরান সরদার, পিতাঃ মোকলেস সরদার। ৭. আসাদ সরদার, পিতাঃ দেলোয়ার সরদার। ৮. জাহিদুল সরদার, পিতাঃ দেলোয়ার সরদার। ৯. অলিল সরদার, পিতাঃ দেলোয়ার সরদার। ১০. মোসাঃ ফাতিমা, স্বামীঃ অলিল সরদার। ১১. মোসাঃ রেশমা, স্বামীঃ জাহিদুল সরদার। ১২. মোসাঃ শ্রাবনী, স্বামীঃ আসাদ সরদার। ১৩. মোসাঃ ফিরোজা, স্বামীঃ মো. মজিবর ডাক্তার। ১৪. মোসাঃ লিলি, স্বামীঃ সেলিম সরদার সহ প্রায় শতাধিক ভাড়াটে লোক মিলে আমার নিজের ও বাড়ির নারীদের উপর হামলা চালায় এবং ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এতে নারীদের মারধরের সময় তাদের ব্যবহারের ২ (দুই) জোড়া ঝুমকা যার ওজন ১ (এক) ভরি, ঘরে থাকা ১ (এক) টি মোবাইল ফোন ও ব্রীক ফিল্ড থেকে দাদন নেয়া নগদ ১(এক) লাখ ৫০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাবেয়া,লাইজু ও পিয়ারা বলেন, স্থানীয় মেম্বর মামুন সরদারেরা এলাকায় খুবই প্রভাবশালী ও দাঙ্গাবাজ। তারা দীর্ঘদিন গায়ের জোরে আমাদের সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসছিলো। ঘটনার দিন আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা হামলা চালায় এবং ব্যাপক মারধর করে ও লুটপাট চালায়। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও অভিযুক্ত মো. মামুন সরদারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার দাদা আঃ কাদের সরদার, মৃত উমার দর্জির নিকট থেকে বিগত ৫০ বছর পূর্বে জমি ক্রয় করেন, আমরা এতদিন ভোগ দখল করে আসছিলাম তবে তারা বিভিন্ন সময়ে বাঁধা প্রদান করতো। এনিয়েই মূলত মারিমারির ঘটনা ঘটে। তবে আমি মারামারির ঘটনায় ছিলাম আমি দুই পক্ষ কে সরিয়ে দিতে গিয়ে হয়তো গায়ে হাত পরতে পারে।
মামুন মেম্বরের নিকট শালিস বৈঠকে দলিল দেখাতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই জমি নিয়ে আদালত চলছে তাই দলিল আদালতে জমা আছে বিধায় দেখাতে পারিনি এবং দলিলে যদি কোনও ভুল হয়ে থাকলে সেটা আদালত বুঝবেন।
আদালতে বিচারাধীন কোন বিষয় নিয়ে হামলা কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হওয়াটা আদালত অবমাননা হয় কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ কামরুজ্জামান মনির বলেন, মামুন মেম্বরদের উৎপাতে অতিষ্ট হয়ে দর্জি বাড়ির লোকজন আমার পরিষদে অভিযোগ করলে আমি শালিস বৈঠকের আয়োজন করলে সেই বৈঠকে মামুন মেম্বররা জমির দলিল দেখাতে না পেরে এক সপ্তাহ সময় নিয়ে তারা আদালতের দারস্ত হয়। তিনি আরো বলেন, আমি যতদূর জানি তাতে মামুন মেম্বরদের কোন কাগজপত্র নেই, তারপরও তারা গায়ের জোরে দর্জি বাড়ির জমি ভোগ দখল করছে।