সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিবেশ ধ্বংস করে উৎপাদনে ব্যস্ত নারায়ণগঞ্জের জেলার সিদ্ধিরগঞ্জে চুন কারখানার মালিকরা (ফলোআপ)
- আপডেট টাইম : ০৫:৫৯:১৩ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২১ আগস্ট ২০২২
- / ২৮১ ৫০০০.০ বার পাঠক
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিবেশ ধ্বংস করে উৎপাদনে ব্যস্ত নারায়ণগঞ্জের চুন কারখানা মালিকরা,এই নিয়ে জাতীয় দৈনিক সময়ের কন্ঠ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে তিন পর্বের সংবাদ প্রকাশিত হয়,কিন্তু দুঃখের বিষয় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসন নীরব ভূমিকার কারণে সাধারণ জনগণের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ চুন কারখানা। এসব কারখানা থেকে নির্গত হচ্ছে বিষাক্ত ধোঁয়া। চুন কারখানার নির্গত গ্যাসের কারণে স্থানীয়দের শ্বাস কষ্ট বেড়েছে। নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে তাদের। এরই মধ্যে এলাকাবাসীর মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বাড়তে শুরু করেছে সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিলের ব্যবসায়ী রিপন মেসার্স রনি লাইমস কারখানার পাশেই বসবাস করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তিনি বলেন, চুন কারখানার মালিকরা এলাকার প্রভাবশালী। সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো কিছু বলতে সাহস পায় না। চুন প্রস্তুতকারী মেসার্স রনি লাইমস ও মেসার্স সুরমা লাইমস তিন দশক ধরে গ্যাসের আগুন ব্যবহার করে পাথর পুড়িয়ে চুন উৎপাদন করে আসছে। আবাসিক এলাকায় এসব কারখানা স্থাপন অবৈধ হলেও নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন কারখানা চালিয়ে আসছেন তারা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ৯টি চুন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কারখানার আশপাশের বাসিন্দাদের সবাই চুন কারখানার আগুনের উত্তাপ গন্ধ আর কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণে স্থানীয়রা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।সরেজমিন দেখা গেছে, হিরাঝিল আবাসিক এলাকায় অবস্থিত রনি লাইমসে একটি ভাট্টিতে চুন পোড়ানো হচ্ছে। দাউ দাউ করে গ্যাসের আগুন জ্বলছে। কালো ধোঁয়ার কারণে আশপাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। রনি লাইমসের সীমানা ঘেঁষে রয়েছে মেসার্স সুরমা লাইমস। ওই দুই কারখানার আনুমানিক ১০০ মিটারের মধ্যে মেসার্স মদিনা লাইমস নামে আরেকটি কারখানায় চুন তৈরি করা হচ্ছে।এই তিন কারখানার মধ্যে সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ওমর ফারুকের কার্যালয়। রনি লাইমসের ভেতরে ৬৪ ফুট জায়গা ডিএনডি নিষ্কাশন খালের বলে চিহ্ন দিয়ে গেছে সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের জরিপকারী দল। এ নিয়ে ডিএনডি ও রনি লাইমসের মধ্যে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে।রনি লাইমস, সুরমা লাইমস ও মদিনা লাইমসের চার পাশেই আবাসিক বহুতল ভবন ও টিনশেড ঘর বাড়ী। রনি ও সুরমা লাইমসের সীমানা ঘেঁষে দক্ষিণ পাশের চারতলা বাড়ির মালিক বাশার মিয়া তিনি এ-ই প্রতিবেদককে বলেন,১৯৮৮ সালে আমাদের বাড়িটি টিনশেড ছিল। আমার বাবা বাড়িটি টিনশেড করার দুই থেকে তিন বছর আগে সেখানে সুরমা লাইমস ছিল আর এখন সুরমা লাইমস এর লাগোয়া গড়ে উঠেছে বহুতল আবাসিক ভবন। আর ১৯৯০ সালের দিকে গড়ে ওঠে রনি লাইমস তখন থেকেই আমরা স্থানীয় বাসিন্দারা চুন কারখানার বিষাক্ত দোয়ায় ছেলে সন্তান বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে ভুগছি,তিনি আক্ষেপ করে বলেন এখানে কেউ বসবাস না করে তাহলে তাকে বোঝানো যাবে না আমরা কোন পরিস্থিতি বসবাস করছি। এমনকি গ্যাসের আগুন যখন দাউ দাউ করে জ্বলে তখন গন্ধ আর তাপে ঘরে থাকা কষ্ট হয়ে যায় এবং নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
ওই তিন কারখানার ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীমানা ঘেঁষে পশ্চিম পাশে মেসার্স ফয়সাল লাইমস। চুন প্রস্তুতের জন্য আনা পাথরগুলো ট্রাকে করে এনে প্রথমে মহাসড়কের ওপর রাখা হয়। পাথরগুলো ট্রাক থেকে নামানোর সময় মাঝেমধ্যে মহাসড়কে যান চলাচলেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ফয়সাল লাইমসের অদূরে একটি চারতলা ভবনে মাদরাসা রয়েছে এবং একটি চারতলা আবাসিক ভবন ও কয়েকটি টিনশেড বাড়ি এর কাছেই এক ভবনে কমিউনিটি সেন্টার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার ডিএনডি সেচ খালের পাড়ে সিআইখোলা ও মক্কীনগর এলাকায় রয়েছে জাজিরা লাইমস,ঢাকা লাইমস, যমুনা লাইমস ও আরাফাত লাইমস। সিআইখোলা এলাকার বাসিন্দা জহির এ-ই প্রতিবেদককে বলেন চুন কারখানাগুলো গড়ে উঠেছিল ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে তখন এ-ই এলাকায় বসতি কম ছিল।
এ বিষয়ে ঢাকা ও যমুনা লাইমসের মালিক খোরশেদ আলম এই প্রতিবেদককে প্রশ্ন রেখে বলেন চুন কারখানাগুলো আগে থেকেই এই এলাকায় আছে নতুন করে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি,দুই বছর আগে পরিবেশ অধিদফতর আমাদের ছয় মাসের সময় বেঁধে দিয়েছে কারখানাগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য কিন্তু সরকার আমাদের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করে না দিলে আমরা কোথায় প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেব?এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা ও যমুনা লাইমস এর মালিক জনাব খোরশেদ আলম বলেন আমাদের চুন কারখানা মালিক সমিতির সভাপতির ও এক নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জনাব আনোয়ার ইসলাম এর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক,তিতাস গ্যাস ও নারায়ণগঞ্জে পরিবেশ অধিদপ্তর সহ প্রশাসনের সকল স্তরের মাসিক মাসোহারা দিয়ে আমরা আমাদের চুন কারখানা গুলোর উৎপাদন অব্যাহত রেখেছি। উল্লেখ দৈনিক সময়ের কন্ঠ পত্রিকা অবৈধ চুন কারখানা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর চুন কারখানা মালিক সমিতির সভাপতি ও এক নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম দৈনিক সময়ের কন্ঠ পত্রিকার কার্যালয়ে গিয়ে বলেন আপনারা আপনাদের চুন কারখানার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে আমাদের কিছুই করতে পারবেন না কারণ আমরা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর ও নারায়ণগঞ্জ ও প্রশাসনের সকল স্তরে মাসিক মাসোহারা দিয়ে আমাদের চুন কারখানা গুলোর উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছি তাই ভালো হয় আপনারা সংবাদ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন এবং আপনাদের কি লাগবে সেটা বলেন।চুন কারখানার মালিক সমিতির সভাপতি ও এক নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের এই অনৈতিক প্রস্তাব সাথে সাথে প্রত্যাখ্যান করে দৈনিক সময়ের কন্ঠ পত্রিকা এবং চুন কারখানার মালিক সমিতির সভাপতিকে এই প্রতিবেদক বলেন সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং সাংবাদিকরা জাতির বিবেক আর সমাজের অন্যায়-অনিয়ম সন্ত্রাস-দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরাই প্রকৃত সাংবাদিকের কাজ।অপর এক প্রশ্নের জবাবে চুন কারখানা মালিক সমিতির সভাপতি ও এক নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম অহমিকার সুরে বলেন সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তাতে কি হয়েছে আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত এক জন জনপ্রতিনিধি আমার এলাকার পরিবেশ আমার থেকে ভালো কেউ বুঝবে?
এ-ই দিকে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন অবৈধ চুন কারখানা গুলো থেকে মাসিক মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চুন কারখানার মালিকরা কারখানা সরিয়ে না নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।যদিও গত দুই বছর আগে চুন কারখানা গুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য চুন কারখানার মালিকদের ছয় মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মঞ্জুরুল হাফিজ চুন কারখানা মালিকদের থেকে মাসোহারা নেওয়ার বিষয় অস্বীকার করে চুন কারখানা মালিক সমিতির সভাপতির নাম ঠিকানা নোটবুকে লিপিবদ্ধ করেন। জেলা প্রশাসক মোঃ মনজুরুল হাফিজ আরো বলেন, আবাসিক এলাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা কাম্য নয়। তিনি আরও বলেন কারখানা মালিকদের তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ এর সিদ্ধিরগঞ্জে পরিবেশ ধ্বংস করে চুন কারখানা গুলোর উৎপাদনের বিষয় জানতে চাইলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব ফারহিনা আহমেদ বলেন বর্তমান সরকার পরিবেশ এ-র বিষয়ে সচেতন এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা চুন কারখানা গুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।