ঢাকা ০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
মহাদেবপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু বরিশালে দুই মাস পর খুলে দেওয়া হলো খলিলের মাংসের দোকান সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে চোরাইকৃত মিশুকের যন্ত্রাংশ উদ্ধার,তিন গাড়ি চোর গ্রেফতার ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে ইবি ছাত্রলীগের বিক্ষোভ-সমাবেশ রাতে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন জুতার দোকানের কর্মচারী রাস্তাতে ধরে মাদক মামলায় ফাসালেন পুলিশ অভিযোগ করেন ফরিদ এই মাসে ঘূর্ণিঝড়ের ইঙ্গিত আবহাওয়া অফিসের রাজধানীর যেসব এলাকায় বসবে কুরবানির হাট এমপিদের চেয়ে এগিয়ে চেয়ারম্যানরা অবৈধ সম্পদ বেশি অপকর্ম ঢাকতে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল ডায়মন্ডহারবার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রাফিক পুলিশের হাতে তুলে ধরা হল ছাতা গুলোকজ, তোয়ালে

সম্ভব-অসম্ভবের বাঁকে সৌন্দর্যের লুকোচুরি

  • সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৩:১৮ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১৮৩ ০.০০০ বার পাঠক

লাইফ স্টাইল।।

এভাবেই বুঝি ইচ্ছাশক্তির মৃত্যু হয়! এক সময় কাছে-দূরে যে-কোনো জায়গায় ভ্রমণের কথা উঠলেই যাওয়ার জন্য মন উন্মুখ হয়ে উঠত। বছর তিনেক আগে পুরো বাংলাদেশ ঘুরে শেষ করার পর থেকে মনটা যেম কেমন হয়ে গেছে। কোথাও যাওয়ার কথা উঠলেই দ্বিতীয়-তৃতীয়বার যেতে হবে ভেবে মন খানিকটা চুপসে যায়!

নাফাখুম জলপ্রপাতে যাওয়ার প্রস্তাবেও একই অবস্থা। যদিও নাফাখুমে এর আগে যাওয়া হয়নি, কিন্তু বান্দরবানে কয়েকবার গিয়েছি। অবশেষে মনকে মানাতে পারলেও বোধহয় গড়িমসির শাস্তি হিসেবে ভ্রমণ ঘিরে তৈরি হলো নানা সংশয়।

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের হাতছানিতে শেষ পর্যন্ত সম্ভব-অসম্ভবের দোলাচলে কীভাবে সেই ভ্রমণ রোমাঞ্চে রূপ নিয়েছিল তারই বর্ণনা দেব আজ।

শনিবার আমার সাপ্তাহিক ছুটি, রবিবার মিলাদুন্নবীর ছুটি। ২০১৯ সালের ৯-১০ নভেম্বর এভাবেই দু’দিনের ছুটি মিলেছিল। অপরদিকে শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যদের ছুটি তিনদিন। এর সাথে একদিন ছুটি নিলেই হয়ে যাচ্ছে চারদিন। নাফাখুম-আমিয়াখুম ভ্রমণের যা উপযুক্ত সময়কাল।

তখন দৈনিক যুগান্তরে যোগ দেওয়ার সবেমাত্র ৬ মাস পেরিয়েছে। অতিরিক্ত ছুটি মিলবে না। অনেক বলে-কয়ে, নানা হিসাব-নিকাশের পর অবশেষে একদিন (শুক্রবার) ছুটি মিলল। সব মিলিয়ে তিনদিন। এই সময়ে ঢাকা থেকে থানচির নাফাখুম-আমিয়াখুম ঘুরে আসা প্রায় অসম্ভব।

এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে অর্থাৎ, একদিন কমিয়ে আনতে বেছে নেওয়া হলো দুর্গম পথ। প্রথমে যাব ঢাকা-বান্দরবান-থানচি হয়ে সাঙ্গু নদী পেরিয়ে ৭-৮ ঘণ্টা হাঁটার ট্রেইল ধরে থুইস্যাপাড়া। আসার পথে ফিরব নাফাখুম, রেমাক্রি, তিন্দু হয়ে থানচি।

পথ বদলালেও মিলছিল না যানবাহন। তিনদিনের ছুটিতে সবাই ছুটছে প্রকৃতির টানে! ঢাকা-বান্দরবান বাসের চিত্রও একই। নানা দৌড়ঝাঁপের পর আল-আমিন জানাল, চাহিদার ভিত্তিতে নতুন একটা বাস যোগ করতে রাজি হয়েছে ডলফিন পরিবহন। ওটাতেই যাব আমরা।

 

যথারীতি অফিস শেষে রাতের বাসে রওনা। পথে দু-একবার দুর্ঘটনার শঙ্কাও জেগেছিল। এ নিয়ে রুক্ষ্ম মেজাজ তো ছিলই, আবার নামিয়ে দিলো বান্দরবান শহরের আগে। সব যাত্রীই চড়া মেজাজ দেখালো। কিন্তু বাসচালক-হেলপারদের তা থোড়াই কেয়ার।

খিটখিটে মেজাজ নিয়েই শুরু হলো যাত্রা। আগে থেকেই ঠিক করে রাখা চান্দের গাড়িতে (জিপ) পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে চলা শুরু। মেঘ-পাহাড়ের মিতালির অপূর্ব সৌন্দর্য আর এঁকেবেঁকে চলা গাড়ির রোমাঞ্চে মেজাজ ঘুরে গেল ১৮০ ডিগ্রি! রাগ-গোস্যা কোথায় হারিয়ে গেল টেরই পেলাম না! কখনো গাড়ি খাড়া পাহাড় বেয়ে ছুটছে আকাশ পানে, কখনও ঢাল বেয়ে নামছে অতলে।

প্রতি মুহূর্তেই শিহরণ জাগানো অনুভূতি। মাঝে মাঝে মেঘ ছুঁয়ে যাচ্ছে পাহাড়কে, সঙ্গে আমাদেরও। মেঘের মধ্যে গাড়ি ঢুকে যাওয়ার মুহূর্তে তৈরি হয় অন্য রকম আবহ। চারদিকে শুধু সাদা আর সাদা। কমিয়ে দেওয়া হয় গাড়ির গতি। মেঘের ছোঁয়ায় ঠাণ্ডা হয়ে আসে ইঞ্জিন। ঠাণ্ডা অনভূতি ছুঁয়ে যায় আমাদেরও।

মুহূর্তটাকে ফ্রেমবন্দি করতে অক্লান্ত চেষ্টা। কিন্তু সে তো ফ্রেমে বন্দি হওয়ার নয়। মোবাইল বা ক্যামেরায় তোলা কোনো ছবি-ভিডিওতেই উঠে আসে না প্রকৃত সৌন্দর্য। এ অনুভূতি পেতে হলে তাই বান্দরবানের উঁচু উঁচু পাহাড়ি রাস্তায় ভ্রমণের বিকল্প নেই।

পথে দেখা শৈলপ্রপাত নিয়ে কথা না বললেই নয়। শহরের খুব কাছেই পাহাড় বেয়ে সোজা নেমে চলা এই ঝরনার সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। সড়কের পাশে গাছগাছালিতে ভরা নির্জন পরিবেশে এর অবস্থান বিমোহিত করবে যে কাউকে। ঝরনার ঠিক উপরের অংশে ছিলাম আমরা। সেখান থেকে একেবারে ঝরনার নিচ পর্যন্ত দেখা যায়। গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশেই সোজা এ স্থানটিতে চলে আসা যায়। ঝরনার নিচের অংশে যেতে চাইলে রয়েছে সিঁড়ি।

অবশ্য উপর থেকেই দেখা যায়, প্রচণ্ড বেগে ঝরে চলছে অবিরাম জলধারা। এখানে পা ফেলতে হয় খুবই সাবধানে। খুবই পিচ্ছিল এই জায়গায় একটু এদিক-সেদিক হলেই পগারপার। ঝরনার নিচের অংশে এই ভয় কম। স্বচ্ছ পানিতে গোসলের সুযোগও রয়েছে। অপরূপ এই ঝরনার স্বচ্ছ, টলটলে পানি শুধু পর্যটকরেই সৌন্দর্যের তৃষ্ণা মেটায় না, পানির চাহিদা মিটিয়ে চলছে হাজারও পাহাড়ি অধিবাসীর।

 

যত দূরে যাই, ততই বিস্ময়। অদূরে পাহাড়ের নিচ দিয়ে বয়ে চলছে নদী, পাহাড়ের কোলে ঘুমুচ্ছে মেঘ, দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ঘন অরণ্যের বুকে দু-একটা ঘর-বাড়ি। বিশাল বিশাল সেগুন গাছের মাঝে দেখা মিলছে আনারস বাগানেরও। চলছে মেঘ-রৌদ্রের লুকোচুরি। এরই মাঝে চলে আসলাম চিম্বুক পাহাড়।

এক সময় স্থানীয়দের ধারণা ছিল, এটাই বান্দরবানের সর্বোচ্চ চূড়া। কিন্তু এখন আমরা জানি, আরও কত উঁচু উঁচু পাহাড় আছে সেখানে। চিম্বুকের উপর দাঁড়ালে চারদিকে দেখা যায় মেঘের রাজ্য। সারি সারি পাহাড়ের কোলে সাদাকালো মেঘের বসতি।

এখানে এসে খানিক বিরতি; গাড়ির দীর্ঘ সারি, চলছে গাড়ি ও যাত্রীদের কাগজপত্র চেকিং। সড়কে এই চেকিংয়ের সময়ক্ষেপণই ভুগিয়েছে বেশ। বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের একাধিক চেকিংয়ে চলে গেছে দীর্ঘ সময়।

মেঘকন্যা নীলগিরি আর নীলাচলে না দাঁড়ালে বুঝি বান্দরবান ভ্রমণই পূর্ণ হয় না! রাজ্যের পাহাড় ও মেঘের লুটোপুটি দেখার উত্তম জায়গা এই দুটিই। পর্যটকদের জন্য বিশ্রামের জায়গা রয়েছে। চারিদিক ঘুরে দেখার জন্য কিছুটা সময় দেওয়া এখানে। এরপর আবার সেই পাহাড়ি রাস্তায় ছুটে চলা; উঁচু থেকে আরও উঁচুতে। এভাবে চলতে চলতে চলে এলো বৃষ্টি।

আমরাও চলে এলাম দেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশের সর্বশেষ উপজেলা থানচি। সাঙ্গু নদীর তীরে গড়ে উঠেছে উপজেলা সদর। খানিকটা ঘিঞ্জি হলেও পাহাড়ের বুক চিরে ছুটে চলা নদীর সৌন্দর্য দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

সেখানে প্রস্তুত থাকা গাইড নিয়ে গেল থানচি থানায়। পরবর্তী ভ্রমণের রুট, আনুমানিক সময়, পরিচয়পত্রের ফটোকপি—সব তথ্য এখানে জমা দিতে হয়। বহু পর্যটকের ভিড়ে সময় গেল বেশ; সঙ্গে বৃষ্টি—দুর্ভোগের লাঘব হতে হতে বিকাল হয়ে আসে। আসরের আযান দেয় থানার সানে থাকা অবস্থায়।

গাইডের কথা অনুযায়ী পাঁচটি টর্চলাইট ও প্লাস্টিকের স্যান্ডেল কেনার পাশাপাশি লাইফজ্যাকেট ভাড়া নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হলো সাঙ্গু নদী ও রেমাক্রি খালে ট্রলারভ্রমণের। শরীরে ক্লান্তি, চোখে সৌন্দর্য আর রাতে দুর্ভোগের ভয়—এই নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে পরবর্তী যাত্রা!

পাহাড়ি পথে ১১ জনের অভিযাত্রী দলের সাথে মাত্র পাঁচটি টর্চলাইট—দুর্ভোগের এই ইঙ্গিতের পাশাপাশি অবিরাম বৃষ্টি জানান দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আগমনের। (চলবে…)

আরো খবর.......

আপলোডকারীর তথ্য

মহাদেবপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু

সম্ভব-অসম্ভবের বাঁকে সৌন্দর্যের লুকোচুরি

আপডেট টাইম : ১১:৩৩:১৮ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

লাইফ স্টাইল।।

এভাবেই বুঝি ইচ্ছাশক্তির মৃত্যু হয়! এক সময় কাছে-দূরে যে-কোনো জায়গায় ভ্রমণের কথা উঠলেই যাওয়ার জন্য মন উন্মুখ হয়ে উঠত। বছর তিনেক আগে পুরো বাংলাদেশ ঘুরে শেষ করার পর থেকে মনটা যেম কেমন হয়ে গেছে। কোথাও যাওয়ার কথা উঠলেই দ্বিতীয়-তৃতীয়বার যেতে হবে ভেবে মন খানিকটা চুপসে যায়!

নাফাখুম জলপ্রপাতে যাওয়ার প্রস্তাবেও একই অবস্থা। যদিও নাফাখুমে এর আগে যাওয়া হয়নি, কিন্তু বান্দরবানে কয়েকবার গিয়েছি। অবশেষে মনকে মানাতে পারলেও বোধহয় গড়িমসির শাস্তি হিসেবে ভ্রমণ ঘিরে তৈরি হলো নানা সংশয়।

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের হাতছানিতে শেষ পর্যন্ত সম্ভব-অসম্ভবের দোলাচলে কীভাবে সেই ভ্রমণ রোমাঞ্চে রূপ নিয়েছিল তারই বর্ণনা দেব আজ।

শনিবার আমার সাপ্তাহিক ছুটি, রবিবার মিলাদুন্নবীর ছুটি। ২০১৯ সালের ৯-১০ নভেম্বর এভাবেই দু’দিনের ছুটি মিলেছিল। অপরদিকে শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যদের ছুটি তিনদিন। এর সাথে একদিন ছুটি নিলেই হয়ে যাচ্ছে চারদিন। নাফাখুম-আমিয়াখুম ভ্রমণের যা উপযুক্ত সময়কাল।

তখন দৈনিক যুগান্তরে যোগ দেওয়ার সবেমাত্র ৬ মাস পেরিয়েছে। অতিরিক্ত ছুটি মিলবে না। অনেক বলে-কয়ে, নানা হিসাব-নিকাশের পর অবশেষে একদিন (শুক্রবার) ছুটি মিলল। সব মিলিয়ে তিনদিন। এই সময়ে ঢাকা থেকে থানচির নাফাখুম-আমিয়াখুম ঘুরে আসা প্রায় অসম্ভব।

এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে অর্থাৎ, একদিন কমিয়ে আনতে বেছে নেওয়া হলো দুর্গম পথ। প্রথমে যাব ঢাকা-বান্দরবান-থানচি হয়ে সাঙ্গু নদী পেরিয়ে ৭-৮ ঘণ্টা হাঁটার ট্রেইল ধরে থুইস্যাপাড়া। আসার পথে ফিরব নাফাখুম, রেমাক্রি, তিন্দু হয়ে থানচি।

পথ বদলালেও মিলছিল না যানবাহন। তিনদিনের ছুটিতে সবাই ছুটছে প্রকৃতির টানে! ঢাকা-বান্দরবান বাসের চিত্রও একই। নানা দৌড়ঝাঁপের পর আল-আমিন জানাল, চাহিদার ভিত্তিতে নতুন একটা বাস যোগ করতে রাজি হয়েছে ডলফিন পরিবহন। ওটাতেই যাব আমরা।

 

যথারীতি অফিস শেষে রাতের বাসে রওনা। পথে দু-একবার দুর্ঘটনার শঙ্কাও জেগেছিল। এ নিয়ে রুক্ষ্ম মেজাজ তো ছিলই, আবার নামিয়ে দিলো বান্দরবান শহরের আগে। সব যাত্রীই চড়া মেজাজ দেখালো। কিন্তু বাসচালক-হেলপারদের তা থোড়াই কেয়ার।

খিটখিটে মেজাজ নিয়েই শুরু হলো যাত্রা। আগে থেকেই ঠিক করে রাখা চান্দের গাড়িতে (জিপ) পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে চলা শুরু। মেঘ-পাহাড়ের মিতালির অপূর্ব সৌন্দর্য আর এঁকেবেঁকে চলা গাড়ির রোমাঞ্চে মেজাজ ঘুরে গেল ১৮০ ডিগ্রি! রাগ-গোস্যা কোথায় হারিয়ে গেল টেরই পেলাম না! কখনো গাড়ি খাড়া পাহাড় বেয়ে ছুটছে আকাশ পানে, কখনও ঢাল বেয়ে নামছে অতলে।

প্রতি মুহূর্তেই শিহরণ জাগানো অনুভূতি। মাঝে মাঝে মেঘ ছুঁয়ে যাচ্ছে পাহাড়কে, সঙ্গে আমাদেরও। মেঘের মধ্যে গাড়ি ঢুকে যাওয়ার মুহূর্তে তৈরি হয় অন্য রকম আবহ। চারদিকে শুধু সাদা আর সাদা। কমিয়ে দেওয়া হয় গাড়ির গতি। মেঘের ছোঁয়ায় ঠাণ্ডা হয়ে আসে ইঞ্জিন। ঠাণ্ডা অনভূতি ছুঁয়ে যায় আমাদেরও।

মুহূর্তটাকে ফ্রেমবন্দি করতে অক্লান্ত চেষ্টা। কিন্তু সে তো ফ্রেমে বন্দি হওয়ার নয়। মোবাইল বা ক্যামেরায় তোলা কোনো ছবি-ভিডিওতেই উঠে আসে না প্রকৃত সৌন্দর্য। এ অনুভূতি পেতে হলে তাই বান্দরবানের উঁচু উঁচু পাহাড়ি রাস্তায় ভ্রমণের বিকল্প নেই।

পথে দেখা শৈলপ্রপাত নিয়ে কথা না বললেই নয়। শহরের খুব কাছেই পাহাড় বেয়ে সোজা নেমে চলা এই ঝরনার সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। সড়কের পাশে গাছগাছালিতে ভরা নির্জন পরিবেশে এর অবস্থান বিমোহিত করবে যে কাউকে। ঝরনার ঠিক উপরের অংশে ছিলাম আমরা। সেখান থেকে একেবারে ঝরনার নিচ পর্যন্ত দেখা যায়। গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশেই সোজা এ স্থানটিতে চলে আসা যায়। ঝরনার নিচের অংশে যেতে চাইলে রয়েছে সিঁড়ি।

অবশ্য উপর থেকেই দেখা যায়, প্রচণ্ড বেগে ঝরে চলছে অবিরাম জলধারা। এখানে পা ফেলতে হয় খুবই সাবধানে। খুবই পিচ্ছিল এই জায়গায় একটু এদিক-সেদিক হলেই পগারপার। ঝরনার নিচের অংশে এই ভয় কম। স্বচ্ছ পানিতে গোসলের সুযোগও রয়েছে। অপরূপ এই ঝরনার স্বচ্ছ, টলটলে পানি শুধু পর্যটকরেই সৌন্দর্যের তৃষ্ণা মেটায় না, পানির চাহিদা মিটিয়ে চলছে হাজারও পাহাড়ি অধিবাসীর।

 

যত দূরে যাই, ততই বিস্ময়। অদূরে পাহাড়ের নিচ দিয়ে বয়ে চলছে নদী, পাহাড়ের কোলে ঘুমুচ্ছে মেঘ, দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ঘন অরণ্যের বুকে দু-একটা ঘর-বাড়ি। বিশাল বিশাল সেগুন গাছের মাঝে দেখা মিলছে আনারস বাগানেরও। চলছে মেঘ-রৌদ্রের লুকোচুরি। এরই মাঝে চলে আসলাম চিম্বুক পাহাড়।

এক সময় স্থানীয়দের ধারণা ছিল, এটাই বান্দরবানের সর্বোচ্চ চূড়া। কিন্তু এখন আমরা জানি, আরও কত উঁচু উঁচু পাহাড় আছে সেখানে। চিম্বুকের উপর দাঁড়ালে চারদিকে দেখা যায় মেঘের রাজ্য। সারি সারি পাহাড়ের কোলে সাদাকালো মেঘের বসতি।

এখানে এসে খানিক বিরতি; গাড়ির দীর্ঘ সারি, চলছে গাড়ি ও যাত্রীদের কাগজপত্র চেকিং। সড়কে এই চেকিংয়ের সময়ক্ষেপণই ভুগিয়েছে বেশ। বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের একাধিক চেকিংয়ে চলে গেছে দীর্ঘ সময়।

মেঘকন্যা নীলগিরি আর নীলাচলে না দাঁড়ালে বুঝি বান্দরবান ভ্রমণই পূর্ণ হয় না! রাজ্যের পাহাড় ও মেঘের লুটোপুটি দেখার উত্তম জায়গা এই দুটিই। পর্যটকদের জন্য বিশ্রামের জায়গা রয়েছে। চারিদিক ঘুরে দেখার জন্য কিছুটা সময় দেওয়া এখানে। এরপর আবার সেই পাহাড়ি রাস্তায় ছুটে চলা; উঁচু থেকে আরও উঁচুতে। এভাবে চলতে চলতে চলে এলো বৃষ্টি।

আমরাও চলে এলাম দেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশের সর্বশেষ উপজেলা থানচি। সাঙ্গু নদীর তীরে গড়ে উঠেছে উপজেলা সদর। খানিকটা ঘিঞ্জি হলেও পাহাড়ের বুক চিরে ছুটে চলা নদীর সৌন্দর্য দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

সেখানে প্রস্তুত থাকা গাইড নিয়ে গেল থানচি থানায়। পরবর্তী ভ্রমণের রুট, আনুমানিক সময়, পরিচয়পত্রের ফটোকপি—সব তথ্য এখানে জমা দিতে হয়। বহু পর্যটকের ভিড়ে সময় গেল বেশ; সঙ্গে বৃষ্টি—দুর্ভোগের লাঘব হতে হতে বিকাল হয়ে আসে। আসরের আযান দেয় থানার সানে থাকা অবস্থায়।

গাইডের কথা অনুযায়ী পাঁচটি টর্চলাইট ও প্লাস্টিকের স্যান্ডেল কেনার পাশাপাশি লাইফজ্যাকেট ভাড়া নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হলো সাঙ্গু নদী ও রেমাক্রি খালে ট্রলারভ্রমণের। শরীরে ক্লান্তি, চোখে সৌন্দর্য আর রাতে দুর্ভোগের ভয়—এই নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে পরবর্তী যাত্রা!

পাহাড়ি পথে ১১ জনের অভিযাত্রী দলের সাথে মাত্র পাঁচটি টর্চলাইট—দুর্ভোগের এই ইঙ্গিতের পাশাপাশি অবিরাম বৃষ্টি জানান দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আগমনের। (চলবে…)