ঢাকা ০২:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

তালার খেশরায় দুই প্রতিবন্ধীর সরকারি বাড়ির দরজা-জানালা রিংস্লাব হজম করেছেন চেয়ারম্যানঅ নুসন্ধানী প্রতিবেদন (পর্ব ১)

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৯:০৩:১৩ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ৬৬৫ ৫০০০.০ বার পাঠক

শেখ সিরাজুল ইসলাম।।

তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের বালিয়া ও মুড়াগাছায় দুইজন দুস্থ প্রতিবন্ধীর সরকারি বাড়ির দরজা-জানলা ও বাথরুমের রিংস্লাব আত্মসাৎ করেছেন খেশরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজীব হোসেন রাজু। সরেজমিনে গেলে বালিয়া গ্রামের তরুন দাশের মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে উজ্জ্বল দাস ও মুড়াগাছা গ্রামের মৃত হারেছ শেখের শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে মোঃ জালাল উদ্দিন শেখ জানান, আনুমানিক দেড় বছর পূর্বে তারা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এর দেয়া সেমি পাকা বাড়ি পান। বাড়ি পাওয়ার দেড় বছর অতিবাহিত হলেও বাড়ির দুইটি দরজা একটি জানালা ও বাথরুমের রিংস্লাব দেয়া হয়নি। জানালা দরজা ও রিংস্লাব না দেওয়ার ফলে সরকারের দেয়া এই বাড়ি আজও পুরোপুরি ভাবে ব্যবহার করতে পারছে না তারা।ঘরের প্রাপ্য মালামাল কোথায় গেল তা আজও জানে না এই দুইজন প্রতিবন্ধী। তবে প্রতিবন্ধী জালাল শেখ কোন উপায় না পেয়ে পুরাতন তক্তা দিয়ে বাথরুমের দরজা তৈরি সহ নিজ অর্থে রিংস্লাব বসিয়ে নিয়েছেন বলে জানান। ঘরের দরজা-জানালা বাথরুমের রিংস্লাবের জন্য উল্লেখিত প্রতিবন্ধীরা বারবার চেয়ারম্যানের কাছে ধরনা দিলেও চেয়ারম্যান তাদের কথায় কর্ণপাত না করে এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে বর্তমান তালা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার ওবায়দুর রহমান বলেন, দুস্থ গৃহহীনদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বাড়ি প্রতি দুই লাখ বিরানব্বই হাজার টাকা ব্যয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে কিছু বাড়ি বরাদ্দ দেয়। সরকারি এই বাড়ি নির্মাণের বরাদ্দ সহ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ইউনিয়ন পরিষদ এবং এর ইউনিয়ন পর্যায়ে বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার ওবায়দুর রহমান আরও বলেন, এই বাড়ি নির্মাণের সময় আমি তালার দায়িত্বে ছিলাম না, তবে ঘরের কোন মালামাল কম দেয়া হলে ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে সেগুলো পূরণ করে দেয়া হবে। এক-দেড় বছর অতিবাহিত হলেও সরকারি বাড়ির এসব মালামাল কেন দেয়া হয়নি এবং যারা এসব মালামাল আত্মসাৎ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের তিনি কোনো উত্তর দেননি।

খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান রাজিব হোসেন রাজুর সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো কথা বলতে রাজি না হয়ে বলেন, এ বিষয়ে আমি পরে তোমার সাথে কথা বলে নেব।

এদিকে প্রতিবন্ধীদের সরকারি ঘরের মালামাল আত্মসাৎ করার ঘটনায় প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কল্যাণ সমিতি সহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধী সংগঠন তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং একই সাথে প্রতিবন্ধীর সরকারি ঘরের মালামাল আত্মসাৎকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের সরকারি ঘরের মালামাল আত্মসাৎকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে প্রতিবন্ধী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ সহ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বাসেত এর সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি ছুটিতে থাকায় সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কাবিখা প্রকল্পের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বলেন এই প্রকল্পটি ইউনিয়ন পর্যায়ে বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা, কোন দুর্নীতি অনিয়ম হলে এর দায় চেয়ারম্যানদের। তবে অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

তালার খেশরায় দুই প্রতিবন্ধীর সরকারি বাড়ির দরজা-জানালা রিংস্লাব হজম করেছেন চেয়ারম্যানঅ নুসন্ধানী প্রতিবেদন (পর্ব ১)

আপডেট টাইম : ০৯:০৩:১৩ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

শেখ সিরাজুল ইসলাম।।

তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের বালিয়া ও মুড়াগাছায় দুইজন দুস্থ প্রতিবন্ধীর সরকারি বাড়ির দরজা-জানলা ও বাথরুমের রিংস্লাব আত্মসাৎ করেছেন খেশরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজীব হোসেন রাজু। সরেজমিনে গেলে বালিয়া গ্রামের তরুন দাশের মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে উজ্জ্বল দাস ও মুড়াগাছা গ্রামের মৃত হারেছ শেখের শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে মোঃ জালাল উদ্দিন শেখ জানান, আনুমানিক দেড় বছর পূর্বে তারা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এর দেয়া সেমি পাকা বাড়ি পান। বাড়ি পাওয়ার দেড় বছর অতিবাহিত হলেও বাড়ির দুইটি দরজা একটি জানালা ও বাথরুমের রিংস্লাব দেয়া হয়নি। জানালা দরজা ও রিংস্লাব না দেওয়ার ফলে সরকারের দেয়া এই বাড়ি আজও পুরোপুরি ভাবে ব্যবহার করতে পারছে না তারা।ঘরের প্রাপ্য মালামাল কোথায় গেল তা আজও জানে না এই দুইজন প্রতিবন্ধী। তবে প্রতিবন্ধী জালাল শেখ কোন উপায় না পেয়ে পুরাতন তক্তা দিয়ে বাথরুমের দরজা তৈরি সহ নিজ অর্থে রিংস্লাব বসিয়ে নিয়েছেন বলে জানান। ঘরের দরজা-জানালা বাথরুমের রিংস্লাবের জন্য উল্লেখিত প্রতিবন্ধীরা বারবার চেয়ারম্যানের কাছে ধরনা দিলেও চেয়ারম্যান তাদের কথায় কর্ণপাত না করে এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে বর্তমান তালা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার ওবায়দুর রহমান বলেন, দুস্থ গৃহহীনদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বাড়ি প্রতি দুই লাখ বিরানব্বই হাজার টাকা ব্যয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে কিছু বাড়ি বরাদ্দ দেয়। সরকারি এই বাড়ি নির্মাণের বরাদ্দ সহ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ইউনিয়ন পরিষদ এবং এর ইউনিয়ন পর্যায়ে বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার ওবায়দুর রহমান আরও বলেন, এই বাড়ি নির্মাণের সময় আমি তালার দায়িত্বে ছিলাম না, তবে ঘরের কোন মালামাল কম দেয়া হলে ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে সেগুলো পূরণ করে দেয়া হবে। এক-দেড় বছর অতিবাহিত হলেও সরকারি বাড়ির এসব মালামাল কেন দেয়া হয়নি এবং যারা এসব মালামাল আত্মসাৎ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের তিনি কোনো উত্তর দেননি।

খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান রাজিব হোসেন রাজুর সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো কথা বলতে রাজি না হয়ে বলেন, এ বিষয়ে আমি পরে তোমার সাথে কথা বলে নেব।

এদিকে প্রতিবন্ধীদের সরকারি ঘরের মালামাল আত্মসাৎ করার ঘটনায় প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কল্যাণ সমিতি সহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধী সংগঠন তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং একই সাথে প্রতিবন্ধীর সরকারি ঘরের মালামাল আত্মসাৎকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের সরকারি ঘরের মালামাল আত্মসাৎকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে প্রতিবন্ধী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ সহ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বাসেত এর সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি ছুটিতে থাকায় সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কাবিখা প্রকল্পের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বলেন এই প্রকল্পটি ইউনিয়ন পর্যায়ে বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা, কোন দুর্নীতি অনিয়ম হলে এর দায় চেয়ারম্যানদের। তবে অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।