সাভারের রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটে শোকের মাতম
- আপডেট টাইম : ০২:১৮:৩৩ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট ২০২১
- / ২১৪ ৫০০০.০ বার পাঠক
লালমনিরহাট রিপোর্টার ॥
অধ্যক্ষ মিন্টু কে হত্যার মধ্য দিয়ে পুরো পরিবারটি পথে বসেছে। বাবা পরিবারের সকলকে বঞ্চিত করে সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে জায়গা জমি সব বিক্রি করে অর্থ তুলে দিয়েছে ছেলেকে। ছেলে সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে। হয়েছে প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ । তার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিবারটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।
পরিবারটির সব স্বপ্ন ছেলে হত্যার খবরে মুহুর্তে শেষ হয়ে গেছে। ছেলে ও জমি জায়গা হারিয়ে পরিবারটি এখন পথে বসে গেছে। মৃত্যের লাশ আজ মঙ্গলবার রাতে কোন এক সময় গ্রামের বাড়ি হাতীবান্ধার টংভাঙ্গা গ্রামে এসে পৌচ্ছাবে। গ্রামটিতে শোকের মাতাম চলছে।
আজ মঙ্গলবার নৃশংস ভাবে ৬ টুকরো করে হত্যার স্বীকার সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মণ(৩৬)’র বাড়ি জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বাড়াই পাড়া গ্রামে ও পরিবারটিতে চলছে শোকের মাতম। তাদের সমবেদনা জানানোর কোন ভাষা নেই। প্রতিবেশী, স্বজন ও পরিবারের গগণ বিদারী কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে গেছে।
ছেলেকে হারিয়ে বাবা সরদ চন্দ্র বর্মন(৬৭) ও মা ত্রিবিনি বালা(৬২) শোকে পাথর হয়ে গেছে। তারা নির্বাক । নতুন কাউকে দেখলে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন। প্রশ্ন করেন মোর বাবাক কি খুঁজে পাইছেন বাহে। কোন বেলা আসিপে। মেলা দিন ধরি মোর বাবাক গেখং না।
সরদ চন্দ্র – ত্রিবিনা বালার দম্পত্তির পাঁচ ছেলে। সবার বড় ছিলেন অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মণ। পেশায় পরিবারটি নিম্ন মধ্যবিত্ত কৃষক। টানাটানির সংসারে অনেক কষ্টের ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে ছিলেন। শৈশব , কৌশরে ছেলে মেধার স্বাক্ষর রেখে আসছিল। প্রতিবেশী হিন্দু – মুসলিম একবাক্যে বলেন সে ছিল অত্যন্ত ভ্রদ্র ও বিনয়ী। সে পড়াশুনা শেষ করে ঢাকায় স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখানে স্থানীয় একটি বেসকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। পাশাপাশি টিউশনি ও কোচিংয়ে জড়িয়ে পড়েন। প্রায় ১০ বছর পূর্বে মা – বাবা, ছোটভাই ও স্বজনদের বুঝিয়ে পরিবারের শেষ সম্বল চাষের ৮ বিঘা জমি বিক্রি করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে ঢাকায় চলে যায়।
সেখানে সরকারি চাকরির জন্য অর্থ ঘুষ দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে যায়। নিঃস্ব হয়ে পূনরায় বাড়ি ফিওে আসেন। বাড়িতে এক বছর অবস্থান করার পর আবারও ঢাকায় ক্যারিযার গড়তে চলে যান। পুনরায় অধ্যাপনা শুরু করেন। সেই সাথে অবসর সময়ে একাধি প্রাইভেট পড়ানো শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যে প্রাইভেট টিচার হিসেবে সাভাওে জনপ্রিয়তা অর্জন করে ফেলে।
গড়ে তুলেন কোচিং সেন্টার। এরমধ্যে গাইবান্ধার রবিউল ইসলাম ও মোতালেবের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। বন্ধুত্ব গভীর হতে গভীর হয়। পরে সাভার তিন বন্ধু মিলে সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করে।
২০০০ সালে হাতীবান্ধা এসএস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি, হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন সরকারি কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করে। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে রংপুর কারমাইকেল থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স ও মাষ্টার্স শেষ করে।
নিহতের চাচাতো বোন অঞ্জলী রানী বলেন, মিন্টু ভাইয়ের সরলতার সুযোগ নিয়ে বারবার প্রতারিত হয়েছেন। একবার বড় সরকারি চাকরি দেয়ার কথা বলে কয়েক লাখ টাকা প্রতারিত হয়। এবার কলেজ প্রতিষ্ঠা করে তাঁকে প্রতারিত করে বন্ধু ও পার্টনারগণ। শেষ পর্যন্ত জীবন কেড়ে নিল। সংগ্রাম, সরলতা ও উদ্যাগতা হওয়া কোন অপরাধ। সাধারণ ঘরের ছেলে মেয়েরা কোথায় নিরাপত্তা পাবে। তারা কি কোথাও সৎ ভাবে কাজ কওে জীবনযাপন করতে পারবেনা। মৃত্যু স্বাভাবিক ঘটনা। স্বাভাবিক মৃত্যু গ্র্যারান্টি চাই। এভাবে অপঘাতে মৃত্যু যেন, কোন একজনেরও না হয়। যারা ভাই কে লোমহর্ষক ও নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেছে । তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসি চাই। বিশেষ ট্যাইব্যুনালে দ্রুত বিচার দাবি করেন।
তার দাবি প্রতি গ্রামের সকলে মত দেয়। তিনি আরো জানান, ভাই পরিবারকে স্বপ্ন দিখিয়ে ছিল। কোরবানির ঈদেও আগে ফোনে মা – বাবা কে বলে ছিল। এখন সুদিন ফিরে এসেছে। তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত আয় রোজগার বেড়েছে। তোমাদের আর কষ্ট করতে হবে না। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তোমাদের যেসব জমি বিক্রি করে টাকা নিয়েছি। সেই জমি তোমাদের পুনরায় কিনে দিব। কিছুদিনের মধ্যে বাড়ি আসব। বাড়িতে এসে বাড়ি ঘর পাকা করে দিব।
এ সময় মা তাঁকে বিয়ের কথা বলে। তখন মাকে বলে বাড়ি আসি ঘর পাকা করি তার পর তোমরা মেয়ে দেখিও। মিণ্টুর চোট ভাই মিন্টুর আগে প্রায় ৩ বছর হয় বিয়ে করেছে। এই বিয়েতে অধ্যক্ষ মিন্টু উপস্থিত থাকতে পারেনি। ছোট ভাইয়ের বিয়ের পর সে একবারও বাড়ি আসেনি। এবার বাড়ির আসার কথা সকলে ছিল খুব খুশি। তাই ছোট ভাইয়ের বউ ভাসুর কে চোখে দেখেনি। ফোনে কথা হয়ে ছিল। পরিবার টির স্বপ্ন মুহুর্তে শেষ হয়ে গেল। পরিবারটি কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জুলাই আশুলিয়ার জামগড়া সংলগ্ন চারতলা এলাকার নিজ বাসা ‘স্বপ্ন নিবাস’ থেকেই নিখোঁজ হন সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মণ। সেদিন হতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। দীর্ঘ ৯ দিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজা খুঁজি করা হয়। অবশেষে ২২ জুলাই আশুলিয়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে অধ্যক্ষ মিন্টুর ছোট ভাই দীপক চন্দ্র বর্মণ। ২৮ দিন পর গতকাল সোমবার (৯ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার বেরন এলাকার নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আঙ্গিনায় মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় খন্ডিত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এদিকে আজ মঙ্গলবার নিহত অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মনের খন্ডিত লাশের পোষ্টমডেম শেষ হয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, লাশ রাতে গ্রামের বাড়িতে এসে পৌচ্ছাবে।