সংবাদ শিরোনাম ::
বাঘায় বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প,ভালো নেই কুমাররা
সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
- আপডেট টাইম : ১২:৩৮:৩৯ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১
- / ২৩৬ ৫০০০.০ বার পাঠক
হাবিল উদ্দিন,বাঘা,প্রতিনিধিঃবাঙালির শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য মৃৎশিল্প।কিন্তু কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্পের প্রসার। অনেকেই এই পেশায় থাকলেও, মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা না থাকায় অভাব-অনটনে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছে তারা।অনেক মৃৎশিল্পী একবেলা আধবেলা খেয়ে দিনানিপাত করছেন।এক সময় ঠুসঠাস শব্দে কর্মব্যস্ত ছিলো কুমার পাড়ায়। এখন আর সেই ব্যস্ততা নেই বললেই চলে।
যুগের সাথে তালমিলিয়ে আধুনিক জিনিসপত্রের ভিড়ে , সরকারি পৃষ্ঠ পোষকতা না থাকা এবং মাটির দাম বৃদ্ধি,জ্বালানি সংকট সহ নানাবিধ পরিস্থিতিতে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে বলে জানান রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পীরা।
বাঘা উপজেলার নারায়ণপুর, পাকুড়িয়া, সরেরহাট, আড়ানী গ্রামের অসংখ্য পরিবার এ পেশার সঙ্গে জড়িয়ে থাকলেও কিছু দিনের ব্যবধানে প্রায় শতাধিক পরিবারের বেশি পরিবার এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছে। উপজেলা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মাটি সংগ্রহ করে মাটির সামগ্রী তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকতেন মৃৎশিল্পীরা বলেও জানাযায়।
আড়ানী পৌর এলাকায় ১৫-২০ টি পরিবার এ কাজের সাথে যুক্ত। এদের মধ্যে সুজয় পাল , ছবি রানি পাল, বিধান পাল বলেন, যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় আমরা মাটির জিনিস তৈরি করে আসছি। এ পেশার সঙ্গে আমরা জড়িত থাকলেও আমাদের উন্নয়নে বা আর্থিক সহায়তায় সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সরকারি ও বিভিন্ন এনজিও বা সমিতি থেকে সহযোগিতা পেলে হয়তো বাপ-দাদার আমলের স্মৃতিকে ধরে রাখা সম্ভব হতো।
পাকুড়িয়া গ্রামের মৃৎশিল্পী শিবু কুমার পাল বলেন,গত কয়েক বছর ধরে টেনে টুনে ধার দেনা করে সংসার চালাতে গিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ি।বাবা তার বাড়ী অংশ থেকে জমি বিক্রি করেও এখন পরিশোধ করতে পারিনি।ভেবে ছিলাম এই পেশা ছেড়েই দেব।কিন্তু পারিনি বাপ দাদার পেশা তাই।
পাকুড়িয়া কুমারপাড়ার মঙ্গল কুমার,অনিল,উজ্জল,ইদ্রজিৎ,বিশ্ বজিৎ, সুশান্ত,অবনী,সুর্দশন সহ প্রায় ১৫-১৭ টি পরিবার এই মৃৎশিল্পের কাজের সাথে যুক্ত। তারা জানান সব রকমের মাটি দিয়ে এ শিল্পের কাজ হয়না। এ শিল্পের জন্য মাটির দাম ৬০০-৭০০ টাকা ট্রলি, তার পরেও এই মাটি অনেকেই দিতে চায় না। জ্বালানি দাম ১২০ টাকা মণ খেজুর গাছের লাকড়ি ছাড়া অন্য লাকড়িতে কাজ হয়না, এর সাথে কাঠের গুড়াও লাগে।
সরেরহাট এলাকার এক নারী মৃৎশিল্পী জানান, প্রথমে মাটি তৈরি করে তার পর বিভিন্ন জিনিস পত্র তৈরি করতে হয়। মাটির তৈরি এসব সামগ্রী শুকানো, রং করাসহ পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত করতে সাত দিন সময় লাগে। পরে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
নারায়নপুর পালপাড়ার মৃৎশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন নানামুখী সংকটের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। ফলে এর ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। স্টিল, চিনামাটি, মেলামাইন ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বাজারে আসার পর মানুষ আর মাটির তৈরি হাঁড়ি, থালা, গ্লাস, মসলা বাটার পাত্র, মাটির ব্যাংক ও খেলনা সামগ্রী ইত্যাদি ব্যবহার করছেন না। এখন শুধু গবাদিপশুর খাবারের জন্য গামলা, কলস, রিং পাট, মাটির ব্যাংক, মাটির পাতিল ও সংখ্যা লঘুদের পূজা-পার্বণের জন্য নির্মিত কিছু সামগ্রীর চাহিদা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলের কিছু মানুষ অবশ্য এখনও দৈনন্দিন প্রয়োজনে কিছু মাটির তৈরি পাত্র ব্যবহার করেন। কিন্তু মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসপত্রের বাজার চাহিদা তেমন একটা নেই বললেই চলে। এক সময় কম দামে মাটি সংগ্রহ করা গেলেও এখন মাটি কিনতে হয় অনেক বেশি দামে। এছাড়া মাটি ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। ফলে কুমার সম্প্রদায়ের সদস্যরা বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। মাটির তৈরি সামগ্রীতে শেষ আঁচড় দিচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা।
বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন – সাধারণ সম্পাদক অ্যাড
লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন ,মাটির জিনিস পত্রের চাহিদা কমতে থাকায় এবং দূরের এলাকা থেকে বেশি দামে মাটি কিনতে হয় বলে মৃৎশিল্পীরা দিন দিন এ ঐতিহ্য থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু সংখ্যক পরিবার বংশ পরম্পরার কারণে এ শিল্প ধরে রেখেছে। এ শিল্পের জন্য সরকারিভাবে যদি কোনো সহযোগিতার ব্যবস্থা করা যায়, তবে বাঙালির ঐতিহ্যময় এ শিল্প ধরে রাখতে পারবে মৃৎশিল্পীরা।
আরো খবর.......