অফিসে মানসিক চাপ ও বিরক্তি কমাবেন যেভাবে
- আপডেট টাইম : ১০:০২:০৮ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১
- / ৩৫০ ৫০০০.০ বার পাঠক
অর্থনীতি রিপোর্টার।।
কর্মস্থলে বা অফিসে কাজ করাটাই মূল। এর জন্যই আপনি বেতন পান এবং তা দিয়েই আপনার সংসার চলে। রুটি–রুজির উৎস বলে অফিসে স্বাভাবিকভাবেই আমরা কিছুটা তটস্থ থাকি। কিন্তু যেখানে দিনের বেশির ভাগ সময়টা কাটে, সেখানকার পরিবেশ যদি সব সময় রসকষহীন কাজের হিসাব করতে করতেই কেটে যায়, তবে আর কতক্ষণ তা উপভোগ করা যায়? তাই অফিসের গুরুগম্ভীর পরিবেশেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। কেন তা করবেন, তা নিয়েই এবার কিছুটা জানাশোনা হোক।
অফিসের গুরুগম্ভীর পরিবেশের পরিবর্তনের একটি উপায় হলো রসবোধের চর্চা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এতে কর্মস্থলের পরিবেশ কিছুটা সুখকর হয়ে ওঠে। আবার কর্মস্থলের পরিবেশ উপভোগ্য হলে তা কাজেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কাজে যেমন গতি বাড়ে, তেমনি কর্মীর কাজের মানও আগের তুলনায় ভালো হয়। অন্যদিকে রসবোধ থাকলে কর্মীর পক্ষে অনেক অপ্রিয় পরিস্থিতি সহজে সামাল দেওয়া সম্ভব হয়। এমনকি কাজে কর্মীর মনোযোগও বাড়ে, কমে কাজসংক্রান্ত মানসিক চাপ।
কর্মস্থলে কর্মীদের রসবোধের প্রভাব নিয়ে একাধিক গবেষণা হয়েছে বিভিন্ন সময়। এসব গবেষণা করেছে হোয়ারটন, এমআইটি ও লন্ডন বিজনেস স্কুলের মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান। এসব গবেষণায় বলা হয়েছে, অফিসে রসবোধের চর্চায় ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হয় অফিসগুলোই। হাসি মানসিক চাপ ও বিরক্তি কমায়, কাজে সংযুক্তির পরিমাণ বাড়ায়। এতে কর্মীদের সৃজনশীলতা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতাও বাড়ে। ফলে দিন শেষে উপকৃত হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। আর কর্মীরা কাজ করতে পারেন মনের আনন্দে।
রসবোধের চর্চায় শারীরিক উপকার হয় সংশ্লিষ্ট কর্মীদের। চিকিৎসাসংক্রান্ত ওয়েবসাইট মায়ো ক্লিনিক বলছে, হাসি–ঠাট্টায় মানুষের মানসিক চাপ কমার পাশাপাশি শারীরিক নানা উপকারী পরিবর্তন আসে। এতে মানুষের অক্সিজেন গ্রহণের হার বাড়ে। মস্তিষ্কে বৃদ্ধি পায় উপকারী হরমোনের নিঃসরণ। একধরনের দুর্ভাবনাহীন ও নিরুদ্বেগ অনুভূতি কাজ করে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। দুশ্চিন্তা কমে যায় এক নিমেষে।
এই নিরুদ্বেগ মনোভাবের প্রভাব পড়ে কর্মীদের কাজে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাস্যরসাত্মক ভিডিও চিত্র দেখার পর কাজের ক্ষেত্রে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা অন্যান্যদের তুলনায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের চাড এ হিগিনস ও ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার টিমোথি এ জাজের করা ২০০৪ সালের এক গবেষণাতেই বলা হয়েছে, যেসব কর্মী অফিসে নিজেদের রসবোধ প্রদর্শন করতে পারেন, তাঁদের পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধির সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি থাকে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট–এর সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, কর্মস্থলে হাসি–ঠাট্টার বিষয়টি দুই ধারওয়ালা তলোয়ারের মতো। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা ও কর্মীদের একটি আনুষ্ঠানিক পদ–পদবি মাফিক কাঠামো থাকে। সেই কাঠামোর তুলনামূলক নিচের স্তরের কর্মীদের মধ্যে একটি রসিকতা যতটা স্বাভাবিক থাকে, কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মুখ থেকে তা শুনলে আবার এর প্রভাব বদলে যায়। কখনো কখনো তা কিছুটা অসংবেদনশীলও হতে পারে। তাই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ঠাট্টা–তামাশা করার ক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা ভালো। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সবারই অভিজ্ঞতা আছে এমন বিষয় নিয়ে তামাশা করা শ্রেয়। এতে কর্মীরাও অনুভব করতে পারবেন যে তাঁর ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিটি দূর আকাশের তারা নন। বরং তাঁদের মতোই একজন।
মার্কেটওয়াচ ডট কমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মায়ামি বিজনেস স্কুলের ডিন জন কোয়েলশ বলেন, রসবোধ যেমন বিভাজন তৈরি করতে পারে, তেমনি বেশ সহায়কও হতে পারে। বিশেষ করে অফিসের ব্যবস্থাপকদের মধ্যে ঠাট্টা–তামাশা করার প্রবণতা থাকলে, তা তাঁদের প্রকৃত নেতা হতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে কর্মীদের মধ্যেও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস জাগাতে পারেন এমন ঊর্ধ্বতনেরা। ফলে সবাই মিলে গতিশীল করতে পারেন প্রতিষ্ঠানের চাকা।
কর্মক্ষেত্রে রসবোধের এই উপকারিতা বুঝতে পেরে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ‘হিউমার কোচ’ নিয়োগ করার চল দেখা যাচ্ছে। ২০১৭ সালে সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির করা এক গবেষণায় জানা যায়, বেশ কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক নেতারা ‘হিউমার কোচ’ নিয়োগ দিচ্ছেন। এই পদে বেতনও বেশ, গড়ে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ ডলার।
তবে কোনো কিছুরই অতিরিক্ত ভালো নয়। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, হাসি–ঠাট্টা করতে গিয়ে তা কাউকে কাউকে আঘাতও দিতে পারে। আপনার কাছে যেটি নির্দোষ তামাশা, পার্শ্ববর্তী কোনো নারী সহকর্মীর কাছে তা বিব্রতকর ও অসংবেদনশীল হতে পারে। সুতরাং ঠাট্টা–তামাশা করতে হবে স্থান–কাল–পাত্র বিবেচনায়। তবে ভদ্রতা বজায় রেখে করা হাসি–ঠাট্টায় উপকারিতার পাল্লাই ভারী।